SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - কৈশোরের মনোসামাজিক সমস্যা-প্রতিকার ও প্রতিরোধ | NCTB BOOK

ভোর রাতে ঘুম ভেঙেছে স্বপ্নার। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিছানায় শুয়ে আছে সে। মায়ের ডাকে বিরক্ত হয়, মেজাজ করে। নবম শ্রেণির ছাত্রী স্বপ্না কিছুদিন হলো স্কুলে যাচ্ছে না। সারা দিন নিজের ঘরে থাকে। বান্ধবীদের খোঁজ নেয় না। কোনো কাজেই আনন্দ পায় না। টেলিভিশনের সিরিয়াল দেখার আগ্রহও তার মধ্যে নেই। স্বপ্নার বৈশিষ্ট্য এমন ছিল না। হাসি-খুশি স্বপ্না বদলে গেছে।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা ঘটনায় মন খারাপ হওয়া, কাজ করতে ইচ্ছা না করা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন রকম মনের অবস্থা কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে এবং তা শরীরকেও প্রভাবিত করে তখন সেটা দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। বিষণ্ণতা এক ধরনের মানসিক অবস্থা যেখানে মনের অসুখী একঘেয়েমির অনুভূতি থাকে। এর ফলে দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজের আগ্রহ থাকে না এবং সে হতাশায় ভুগতে থাকে। খাবারে অনীহা, ঘুমের ব্যাঘাত ইত্যাদি ধরনের শারীরিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে। উল্লিখিত ঘটনায় স্বপ্নার মধ্যে হতাশা বিষণ্নতার লক্ষণ স্পষ্ট ধরা পড়ে।

 

বিষণ্নতা গুরুতর হলে নিচের লক্ষণ দেখা দেয়

  • দিনের বেশির ভাগ সময় মন খারাপ থাকা বা বিরক্তির অনুভূতি থাকা
  • আনন্দময় কোনো কাজে আগ্রহ কমতে থাকা ওজন কমে যাওয়া বা দৈহিক শক্তি কমে যাওয়া
  • ঘুমের ব্যাঘাত হওয়া। ঘুমের স্থায়িত্ব বজায় থাকে না, বারবার ঘুম ভেঙে যায়, ঘুম আসতে চায় না বা ভোর রাতে ঘুম ভেঙে যায় ইত্যাদি
  • ক্ষুধা কমে যাওয়া, খাবারের আগ্রহ কমে যাওয়া
  • মনোযোগের অভাব, উদ্বেগ বেশি হলে কোনো কিছু মনে রাখতে না পারা
  • নিজের ক্ষতির চিন্তা করা, আত্মহত্যার পরিকল্পনা করা।

ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের মধ্যে বিষণ্নতা বেশি দেখা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে কৈশোরের বিষণ্নতার সাথে শিশুকালের মানসিক অবস্থার বিশেষ সম্পর্ক আছে। যে ধরনের পরিবারে শৈশবে সন্তান মা-বাবার দৃঢ় বন্ধন থাকে না, শিশু প্রতিপালনে স্নেহ আদরের বঞ্চনা থাকে এবং পরিবারের মা বা বাবা যে কোনো একজনের মৃত্যুতে নেতিবাচক মানসিক কাঠামো তৈরি হয়। এসব পরিবারের ছেলেমেয়েদের মধ্যে হতাশা বিষণ্নতার

সম্ভাবনা থাকে

হতাশা বিষণ্নতার কারণ

  • শিশু প্রতিপালনে অতিরিক্ত কঠোরতা বিষণ্নতা আনতে পারে। সেখানে স্বাধীন ব্যক্তিসত্তা গড়ে উঠে না তারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, আত্মবিশ্বাস হারায়। ধরনের পরিবারের ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন কারণে হতাশাগ্রস্ত থাকে, নিজেকে অপরাধী মনে করে।
  • পরিবারের বাবা-মায়ের দাম্পত্য কলহ, বিবাহ বিচ্ছেদ সন্তানদের মধ্যে বিষণ্নতা সৃষ্টি করে। পরিবারের আর্থিক সংকট কৈশোরে ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিষণ্ণতা আনে
  • সমবয়সীদের সাথে সম্পর্কের অবনতি, ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে মনোমালিন্য, বন্ধু কর্তৃক প্রত্যাখ্যান, বন্ধুত্বের ভাঙন বিষণ্নতার সৃষ্টি করে
  • পড়াশোনায় ব্যর্থতা অতিরিক্ত মানসিক চাপে বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে

প্রতিকার-প্রতিরোধ

বিষণ্নতায় ছেলেমেয়েরা নিজেকে খুব একা, অসহায় মনে করে। সামান্য কারণেই তারা কেঁদে ফেলে, তারা কর্ম দক্ষতা হারায় এবং গুরুতর হলে আত্মহননের চিন্তা করে থাকে। এভাবে বিষণ্নতায় অত্যন্ত ভয়াবহ পরিণতির সৃষ্টি হতে পারে। বিষণ্নতা প্রতিরোধ প্রতিকারে করণীয় বিষয়গুলো হলো-

  • যে কোনো পরিস্থিতিকে ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করতে শেখা।
  • যে কোনো ঘটনার ভালো দিকগুলো খুঁজে পেতে শেখা
  • জটিল অবস্থা মেনে নেওয়ার ধৈর্য তৈরি করা। নিজের চিন্তা, অনুভূতি বাবা-মা বা নির্ভরযোগ্য কারও কাছে প্রকাশ করা
  • শখ, বিনোদন, সৃজনধর্মী কাজ, খেলাধুলায় নিজেকে ব্যস্ত রাখা।

 

  • অন্য কারও বিষণ্নতায় তাকে সঙ্গ দেওয়া, তার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া। সে যেন তার ব্যক্তিগত অনুভূতি অন্যের কাছে প্রকাশ করতে পারে তার সুযোগ সৃষ্টি করা।

 

কাজ - বিষণ্নতার কারণগুলো উল্লেখ কর। এর পাশাপাশি প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ কর।

Content added By